চাকা খুলে পড়লেও নিরাপদে অবতরণ করল বিমান বাংলাদেশের ফ্লাইট

 চাকা খুলে পড়লেও নিরাপদে অবতরণ করল বিমান বাংলাদেশের ফ্লাইট

কক্সবাজার থেকে ঢাকাগামী বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের একটি উড়োজাহাজ উড্ডয়নের কিছুক্ষণ পর পেছনের একটি চাকা খুলে নিচে পড়ে যায়। তবে দুর্ঘটনার আশঙ্কা থাকা সত্ত্বেও উড়োজাহাজটি শেষ পর্যন্ত নিরাপদে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করতে সক্ষম হয়।

ঘটনার সময় উড়োজাহাজটি ছিল ড্যাশ ৮-৪০০ মডেলের, যা কানাডায় তৈরি স্বল্পপাল্লার একটি টার্বোপ্রপ যাত্রীবাহী বিমান। এ ধরনের উড়োজাহাজ দিয়ে বিমান বাংলাদেশ মূলত অভ্যন্তরীণ ও আঞ্চলিক রুটে ফ্লাইট পরিচালনা করে থাকে।

আজ শুক্রবার দুপুর ১টা ২০ মিনিটে কক্সবাজার থেকে ঢাকার উদ্দেশে রওনা দেয় বিজি ৪৩৬ ফ্লাইটটি। উড়োজাহাজটিতে শিশুসহ মোট ৭১ জন যাত্রী ছিলেন। বিকেল ২টা ২০ মিনিটে এটি ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে জরুরি অবতরণ করে। বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের জনসংযোগ মহাব্যবস্থাপক এ বি এম রওশন কবীর নিশ্চিত করেন, সব যাত্রী নিরাপদে নেমে আসেন।

বিশেষজ্ঞদের মতে, এমন পরিস্থিতি অত্যন্ত জটিল ও ঝুঁকিপূর্ণ। এক পাশের চাকা খুলে গেলে উড়োজাহাজটি ভারসাম্য হারিয়ে রানওয়ে থেকে ছিটকে পড়ার আশঙ্কা থাকে। তাই নির্দিষ্ট গতি ও কোণে উড়োজাহাজ নামাতে হয় যাতে ভারসাম্য বজায় থাকে। এ ক্ষেত্রে পাইলটের দক্ষতা এবং তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্ত গ্রহণই সবকিছু নির্ধারণ করে।

পাইলট এমন জরুরি পরিস্থিতিতে শুরুতেই কন্ট্রোল টাওয়ারে অবহিত করেন। এরপর রানওয়েতে প্রস্তুত রাখা হয় ফায়ার সার্ভিস, অ্যাম্বুলেন্স ও নিরাপত্তা বাহিনী। যাত্রীদের উদ্দেশে পাইলট আশ্বস্তমূলক বার্তা দেন এবং সাহস জোগানোর চেষ্টা করেন।

বিমানের এক পাইলট জানান, পেছনের এক পাশের দুটি চাকার মধ্যে একটি খুলে পড়েছিল। ফলে অপর পাশে থাকা দুটি চাকায় ভার বেশি দিয়ে দক্ষতার সঙ্গে অবতরণ করানো হয়। এই দুঃসাহসিক অবতরণে মূল ভূমিকা রাখেন ক্যাপ্টেন বিল্লাহ ও ফার্স্ট অফিসার জায়েদ। বিমানের ফেসবুক পেজে তাঁদের প্রশংসা করে একটি পোস্টও করা হয়।

তবে ঘটনার পর বিমানের রক্ষণাবেক্ষণ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। কেউ কেউ এটিকে কেবল যান্ত্রিক ত্রুটি নয়, বরং কর্তৃপক্ষের গাফিলতি হিসেবে দেখছেন। বিমানের একাধিক সূত্র বলছে, এ ঘটনায় রক্ষণাবেক্ষণ ও প্রকৌশল বিভাগের অব্যবস্থাপনার চিত্র স্পষ্ট হয়েছে।

বিমানের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, কিছুদিন আগে প্রকৌশলীদের চাকরির বয়সসীমা ও সুযোগ-সুবিধা বাড়ানো হয়েছে। অথচ তাঁদের দায়িত্ব পালনে ঘাটতি থেকেই গেছে, যার ফলশ্রুতিতে আকাশে থাকা অবস্থায় উড়োজাহাজের চাকা খুলে পড়েছে। এর ফলে বিমান বাংলাদেশের ভাবমূর্তিতে বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে বলে তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেন।

আরেক কর্মকর্তা বলেন, ৫ আগস্টের পর দেশে অনেক পরিবর্তন এলেও বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের ভেতরে কাঙ্ক্ষিত সংস্কার হয়নি। যোগ্য নেতৃত্বের অভাবে প্রতিষ্ঠানটি কাঙ্ক্ষিত পথে এগোচ্ছে না।


Previous Post Next Post