দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী লি চুয়াঙ্গির সংগ্রামী জীবন: ভিক্ষুক থেকে চিকিৎসক
ছোটবেলায় সেরিব্রাল পালসিতে আক্রান্ত হন চীনের ইউনান প্রদেশের লি চুয়াঙ্গি। এই জটিল স্নায়ুবিক রোগের কারণে তাঁর দৃষ্টিশক্তি, কথা বলা, শেখা এবং পেশি নিয়ন্ত্রণে মারাত্মক সমস্যা দেখা দেয়। মাত্র এক বছর বয়সে ধরা পড়ে এই রোগ, যার সঙ্গে দীর্ঘ ১৬ বছর লড়াই চালিয়ে যান তিনি।
শারীরিক সীমাবদ্ধতার কাছে হার মানেননি লি। ১৬ বছর বয়সে জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দেন। শুরু করেন প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা। দ্বিতীয় শ্রেণিতে ভর্তি হয়ে আবারও শিখতে শুরু করেন বর্ণমালা, শব্দ আর সংখ্যা। এরপর ২৫ বছর বয়সে মেডিকেল কলেজে ভর্তি হন তিনি।
এই পথচলা মোটেই সহজ ছিল না।
৯ বছর বয়সে পরিবারের দারিদ্র্য চরমে পৌঁছায়। এক ব্যর্থ অস্ত্রোপচারের পর লি সিদ্ধান্ত নেন, পরিবারের বোঝা হয়ে থাকতে চান না। একটি চাকরির খোঁজে নামেন, কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত এক প্রতারকের খপ্পরে পড়ে যান। সেই ব্যক্তি তাঁকে জোর করে রাস্তায় ভিক্ষা করতে বাধ্য করেন। ৯ থেকে ১৬ বছর বয়স পর্যন্ত লি ওই ব্যক্তির হাত ধরে নানা শহরের রাস্তায় সহানুভূতির আশায় দাঁড়িয়ে থাকতেন। মাস শেষে হাতে পেতেন মাত্র ১০০ ইউয়ান।
১৬ বছর বয়সে, বয়স বেড়ে যাওয়ায় সেই ব্যক্তি লি-কে ছেড়ে দেন। তখনই লি বুঝতে পারেন, তিনি এখনও সম্পূর্ণ নিরক্ষর। নিজেকে বদলাতে হবে—এই উপলব্ধি থেকেই শুরু হয় নতুন পথচলা।
শিক্ষার প্রতি প্রবল আগ্রহ এবং আত্মবিশ্বাসে তিনি ধাপে ধাপে এগিয়ে যেতে থাকেন। ২০১৩ সালে ২৫ বছর বয়সে ভর্তি হন একটি মেডিকেল কলেজে। ২০১৬ সালে সুযোগ পান বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লিনিক্যাল প্রোগ্রামে। ক্লাসে তিনি নিজেকে উপস্থাপন করেন একজন ‘জীবন্ত কেস স্টাডি’ হিসেবে—সেরিব্রাল পালসির একজন ভুক্তভোগী এবং ভবিষ্যৎ চিকিৎসক।
২০১৯ সালে ৩১ বছর বয়সে তিনি মেডিকেল স্নাতক হন। এরপর কিছুদিন একটি মেডিকেল কোম্পানিতে চাকরি করেন। কিন্তু হৃদয়ের টানে সেবার পথে ফিরে আসেন। ইন্টার্নশিপ নেন হেনান প্রদেশের একটি কমিউনিটি ক্লিনিকে। সেখানেই শুরু হয় তাঁর প্রত্যক্ষ চিকিৎসাসেবা।
লি বলেন, “আমি বড় কোনো হাসপাতালে কাজের আশা করি না। আমার স্বপ্ন, ছোট একটি ক্লিনিকে আমার প্রতিবেশীদের পাশে থাকা।”
এই স্বপ্ন নিয়েই তিনি ফিরে আসেন নিজ প্রদেশ ইউনানে। সেখানেই গড়ে তোলেন নিজের ছোট্ট ক্লিনিক—একটি বাস্তব স্বপ্নের নাম।
লি চুয়াঙ্গির জীবন কেবল একজন প্রতিবন্ধী মানুষের সংগ্রামের গল্প নয়, বরং এটি এক অনবদ্য প্রমাণ—অসাধ্যকে সাধন করার জন্য মনোবলই যথেষ্ট।